বাংলাদেশী ট্রাভেলারের যে ২০ টি জিনিস অবশ্যই সাথে রাখা উচিত
ছোটোবেলায় নানুবাড়ি যাওয়ার আগের রাতে আমি আর আম্মু সবসময় ঘটা করে ব্যাগ গুছাতাম। আম্মু কাপড় ভাঁজ করে দিত, আর আমি তা ব্যাগে তুলতাম। আমাকে ছাড়া যদি কখনো আম্মু ব্যাগ গুছিয়ে ফেলত, তাহলে আমি সব বের করে আবার ব্যাগে রাখতাম। এখন অবশ্য এই কাজটা শুধুমাত্র একটা রুটিনে পরিণত হয়েছে। আমি আর আমার বউ পারলে কোথাও যাওয়ার ৫ মিনিট আগে কোনমতে ব্যাগ প্যাক করি। অবশ্য একটু প্ল্যান করে ব্যাগ গুছালে সময়, ঝামেলা, খরচ – সবই বাঁচে। বাংলাদেশী ট্রাভেলার হিসেবে আমরা কোথাও গেলে যা যা অবশ্যই নেয়ার চেষ্টা করি, তার একটা লিস্ট দিলাম। জায়গা ও প্রয়োজন ভেদে এই জিনিসগুলো সাথে থাকলে ঝামেলা কমে। কিছু বাদ পারলে জানাবেন!
বাংলাদেশী ট্রাভেলারের যে জিনিস সাথে রাখা উচিত
- ছোট ব্যাগ বা day pack: দেশে বিদেশে যেখানেই যাই না কেনো, এটা মাস্ট। বড় ব্যাগ নিয়ে ঘোরা কঠিন, আর একদম ব্যাগ ছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিস (পানির বোতল, টাকা, পাসপোর্ট, ছাতা, ছোট ট্রাইপড ইত্যাদি) হোটেলে ফেলে আসতে হয়।
- কেবিন লাগেজ: Day pack দিয়েও এর কাজ চলতে পারে। আমরা সাধারণত বড়ো একটা ব্যাগ না নিয়ে ২ জন কাধে দুটো স্কুল ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক নিতে বেশি পছন্দ করি। এতে লাগেজের জন্য অযথা এয়ারপর্টে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা লাগে না।
- পাসপোর্ট কভার: ভ্রমণের সময় যেমন এটা পাসপোর্টের সুরক্ষা দেয়, তেমনি যখন আপনি ঘুরছেন না, এবং পাসপোর্টটা ড্রয়ারে পড়ে আছে, তখন তেলাপোকার আক্রমণ থেকেও বাঁচায়। কিছু কিছু পাসপোর্ট কভারে টিকেট, টাকা, কার্ড রাখারও জায়গা থাকে।
- ব্যাগের জন্য ছোট তালা: কথায় আছে “সাবধানের মাইর নাই”। বড় লাগেজ নিলে তো অবশ্যই, ছোট ব্যাগ নিলেও তালা সাথে নিয়ে যাওয়া ভালো। এতে করে ব্যাগ হোটেলে রেখে বের হলে দুশ্চিন্তা কম হবে। আমি ছোট একটা কম্বিনেশন লক ব্যবহার করি গত ৩ বছর ধরে।
- ম্যারেজ সার্টিফিকেট, NID আর পাসপোর্ট এর ফটোকপি ও স্ক্যান কপি: আমরা একবার খাগ্রাছড়ি গিয়ে কাবিননামা সাথে না থাকায় খুব বিপদে পড়ি। ফোন এ বিয়ের ছবি দেখিয়েও হোটেলে রুম পাইনি। ইনানিতে NID সাথে না থাকায় হোটেলে বুকিং থাকার পরও উঠতে দিচ্ছিল না। পরে ফোনে স্ক্যান কপি থাকায় রক্ষা। বিপদ, ঝামেলা বা বিব্রতকর অবস্থা ঠেকাতে তাই এই তিনটা কাগজের ফটোকপি আর স্ক্যান সবসময় এখন সাথে রাখা বাধ্যতামূলক।
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি: দেশের ভিতরে খুব একটা দরকার নেই। কিন্তু দেশের বাইরে গেলে সিম কিনতে, পুলিশ এর পারমিশন নিতে (কন্ট্রোলড এরিয়ার জন্য), অনেক সময় ইমিগ্রেশন পার হতে ছবি লাগে। তখন সাথে ছবি না থাকলে বাড়তি টাকা গুনতে হয়।
- ভাজ করা যায় এমন পানির বোতল: পানির বোতল সাথে থাকলে বার বার পানি কিনতে হয় না। হোটেল এর রেস্টুরেন্ট থেকে রিফিল করে নিলেই হয়। আর যদি কলাপসিবল বোতল জোগাড় করতে পারেন, তাহলে সহজে কম জাগায় ক্যারি করা যায়। বিশেষ করে এয়ারপর্ট এ পানি নিয়ে যাওয়া যায় না। তখন ভাজ করে ব্যাগে নিয়ে নেয়া যায়।
- ছাতা বা রেনকোট
- ওষুধ পত্র: এটা নিয়ে বেশি কিছু লিখবো না। এর গুরুত্ব সবাই জানে। আলাদা ছোট একটা ব্যাগ এ প্রয়োজনীয় সব ওষুধ গুছিয়ে নিয়ে গেলেই হলো।
- ট্রাভেল জার্নাল: এই জিনিস ছাড়া আমরা কোথাও যাই না। কোথাও ঘুরতে গেলে সব প্ল্যান, সব খরচের হিসাব আর প্রতিদিনকার হাইলাইটস লিখে রাখা আমাদের অনেকদিনের অভ্যাস। তাই এই ট্রাভেল জার্নাল অবশ্যই সাথে থাকে।
- কারেন্সি কনভার্টার অ্যাপ, সাইটসিইং অ্যাপ, গুগল এর অফলাইন ম্যাপ: মোবাইল এ এই অ্যাপ গুলো থাকলে নতুন শহরে চলতে ফিরতে সুবিধা হয়।
- ভালো মানের মাল্টি কনভার্টার: হোটেল এর রুমে ফোন চার্জ দেওয়া সবসময়ই একটা ঝামেলার কাজ। হয় পর্ট খুঁজে পাওয়া যায় না, বা টুপিন এর জায়গায় থ্রি পিন, থ্রিপিনের জাগায় টুপিন। সাথে মাল্টি কনভার্টার থাকলে এই ঝামেলা এড়ানো যায়।
- USB OTG ও পেন ড্রাইভ: ঘুরতে গেলে আমি প্রচুর ছবি তুলি, ভিডিও করি। আর তার সবই মোবাইল এ। মোবাইল এর জায়গা শেষ হয়ে আসতে নিলেই আমি সব ছবি আর ভিডিও OTG দিয়ে পেন ড্রাইভ এ ট্রান্সফার করে দেই।
- নেক পিলো: আমি নিজে এটা কখনো ব্যবহার করিনি। কিন্তু লম্বা জার্নিতে অনেককে দেখেছি এটা ঘাড়ে লাগিয়ে ঘুম দিতে। ফু দিয়ে ফোলানো যায় এমন নেক পিলো হলে প্রয়োজন মত ব্যাগ থেকে বের করে ব্যবহার করা যায়।
- পাওয়ার ব্যাংক: দুই দিন টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নৌকায় ছিলাম। পাওয়ার ব্যাংক না থাকলে উপায় ছিল না। ট্যুরে গেলে আসলে বাইরে বাইরে থাকা হয়। তাই পাওয়ার ব্যাংক খুবই জরুরি।
- ছোট গামছা: টাওয়েলের থেকে জায়গা কম লাগে, শুকায় তাড়াতাড়ি।
- Toiletries ও ইলেক্ট্রনিক্স পাউচ: টুথব্রাশ, সানস্ক্রিন, ডিওডোরেন্ট, ভেসলিন ইত্যাদির জন্য ছোট্ট একটা পাউচ নিয়ে নিলে ডে প্যাক বা ব্যাকপ্যাক এর বিভিন্ন পকেটে বার বার হাতরাতে হয় না। একই ভাবে চার্জার, ডাটা ক্যাবল, OTG, পাওয়ার ব্যাংক ইত্যাদির জন্যও চাই আলাদা একটা পাউচ। তাহলে যখন যেটা প্রয়োজন সহজে খুঁজে পাওয়া যায়।
- হেডফোন ও হেডফোন কভার
- জিপলক বা প্লাস্টিকের ব্যাগ: ভেজা কাপড় নিতে কাজে আসতে পারে। বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে জুতা ক্যারি করা যায়।
- ছোট ট্রাইপড: সেলফি তোলার একটা মজা আছে। আবার ট্রাইপড এ টাইমার সেট করে ছবি তোলার ও আনন্দ আছে। তাছাড়া টাইমলাপস ভিডিও করতে হলে ট্রাইপড এর বিকল্প নেই।
আশা করি লিস্টটা কাজে আসবে। আপনার পছন্দের তালিকা থেকে কোনটি বাদ গেল কি? আপনি অবশ্যই কোন জিনিসটা আপনার ব্যাগ এ রাখেন? লিখে জানান কমেন্টে।