ঝটপট ঘুরে এলাম রাজশাহী
উত্তরবঙ্গের প্রাচীন এক শহর রাজশাহী । চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের মত পর্যটন নগরী না হয়েও রাজশাহী ভ্রমণ আপনাকে দিবে এক স্নিগ্ধ অনুভূতি । এমনি স্নিগ্ধ অনুভূতি নিয়ে আমরা বন্ধুরা ঢাকা ফিরেছিলাম মাত্র একদিন ভ্রমণ শেষে । বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে সবে চাকরীতে ঢুকেছি আমরা । তাই যাত্রাটা শুরু করলাম বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকেই ।
কল্যাণপুর থেকে টিকেট করার পর অফিস শেষে বৃহ:বার রাত ১১.৩০ মিনিটে আমরা হানিফ বাসে উঠলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট থেকে । বাস হাইওয়ে তে তুমুলবেগে ছুটে মাত্র ৩.৩০ ঘন্টায় পৌছে দিল সিরাজগঞ্জের হাইওয়ে রেস্টুরেন্টগুলোতে। আবারো যাত্রার মাঝে যখন কুয়াশাস্নাত ভোরে চোখ খুলে বাইরে তাকালাম, তখন বাইরে দিগন্তবিস্তৃর্ণ চলনবিল। খুব আফসোস হয়েছে তখন, যদি চলনবিলে কোনো ট্রিপ প্ল্যান করতে পারতাম! ভোর ৬.৩০ এ পৌছে গেলাম রুয়েট ক্যাম্পাসে । সেখানে আরো বন্ধুরা অপেক্ষা করছিল । সবাই মিলে হইচই করে চলে গেলাম শহরের কেন্দ্রবিন্দু সাহেববাজারে । নাস্তা শেষ করে চলে গেলাম অটোরিক্সা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে । রুয়েট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একদম পাশাপাশি । দুটো ক্যাম্পাসই খুব সুন্দর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে যেন নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে গেলাম । সবুজে বিস্তীর্ণ ক্যাম্পাসে ছুটোছুটি, হলের সামনে বসে চা খাওয়া, চারুকলা ভবনের ছাত্রদের শৈল্পিক নিদর্শন দেখা, ১৯৭১ সালের সৃতিবিজড়িত বদ্ধভুমি, আর এরই মাঝে নামলো ঝুম বৃস্টি । দিনের সব ক্লান্তি ভুলে আমরা ক্যাম্পাসের ভিতরেই দুপুরের খাবার খেয়েই রওনা হলাম পুঠিয়া রাজবাড়ীতে । যেতে হয় নাটোরগামী বাসে । মাত্র ৪০-৫০ মিনিটে চলে গেলাম সেখানে । পুরাকীর্তি আর নিদর্শন দেখে খুব দ্রুত ফিরে এলাম শহরে, পদ্মা পাড়ে বিকাল কাটাবো বলে । পদ্মা পাড়ের বি ডি আর ক্যাম্প এরিয়াতে যখন পৌছালাম, তখনও ঝলমলে বিকেল। কারও যদি শরতের শুভ্র সৌন্দর্য নিয়ে দ্বিধা থাকে, তাহলে আমি বলবো তার কাছে শরতের পদ্মার রূপ অজানা । সন্ধ্যা নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, তারপর প্রোমদতরীতে ঘুরলাম নদীর বুকে। দলবেঁধে গান গেয়ে আর নদীর বুকের অসাধারণ স্মৃতি নিয়ে পাড়ে ফিরলাম। ধোঁয়াওঠা গ্রীল চিকেন আর নান খেয়ে চলে এলাম পদ্মাপাড় থেকে। রাতেই আমরা ঢাকায় ফিরবো । কিন্তু রেশমের শহরে এসে রেশম দেখবো না, তা কি হয়? তাই চললাম সপুরাতে। পুরো এলাকাতেই সিল্কের কাজ হয় । সপুরার মিলে মুগ্ধ হয়ে দেখলাম রেশম তৈরীর পদ্ধতি। বন্ধুরা কেনাকাটা করল অনেকে । অবশেষে রাত ঘনিয়ে এল, ফেরার পালা । বাস চেপে ফিরে এলাম ঢাকায়, ফেলে আসলাম পরিচ্ছন্ন স্নিগ্ধ নগরী রাজশাহীকে ।
যেভাবে যাবেন: কল্যাণপুর থেকে বাস সার্ভিস যেমন, হানিফ, শ্যামলী, ন্যাশনাল, দেশ ট্যাভেলে যেতে পারেন। ভাড়া: (এসি: ৬৫০ টাকার মধ্যে), (ননএসি: ৪৫০ টাকার মধ্যে)
থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা: সাহেব বাজার ও স্টেশন বাজারে থাকা ও খাওয়ার সব রকমের ব্যবস্থাই আছে। পদ্মাপাড় বি ডি আর এরিয়াতে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে ।
দর্শনীয় স্থান: পদ্মাপাড়, রাবি ক্যৗাম্পাস, সপুরা সিল্ক, পুঠিয়া, জিয়া পার্ক। এই তালিকা থেকেও পছন্দের হোটেল ও খাবার দোকান বেছে নিতে পারেন।