২ বা ৩ দিনের ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাব?
বাংলাদেশের মানুষ এখন বেশ ভ্রমণপ্রিয়। ক্লাস বা অফিসের ফাঁকে কখন কোথায় ঘুরতে যাব, সেটা প্ল্যান করতে করতে আমার মত অনেকের সময় কাটে! টানা তিন দিনের ছুটি হলে তো অবশ্যই, এমনকি ২ দিনের ছুটিতেও ঘুরতে পারলে মন্দ হয় না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ২ থেকে ৩ দিনে ঘুরে আসা যায়, এমন সব জায়গা নিয়ে লিখছি এই আর্টিকেলে। আশা করি কাজে আসবে।
মনে রাখবেন: লং উইকেন্ডে মোটামুটি সব জাগাতেই অনেক ভিড় হয়। তাই প্ল্যান একটু আগে থেকে না করে রাখলে পরে ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে। এরকম ক্ষেত্রে ঘুরতে যাওয়ার কমপক্ষে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ আগে বাস আর হোটেলের বুকিং দিয়ে রাখা ভালো।
২ – ৩ দিনের ছুটিতে যেখানে যাবেন
সুন্দরবন: সুন্দরবন যে কত সুন্দর, তা বুঝতে আমার ২৮ বছর লেগেছে। রিভার ক্রুজ, গহীন বন আর তারা ভরা রাতের অসাধারণ এবং ইউনিক অভিজ্ঞতার জন্য এই জায়গা বেস্ট। তিন দিনের ছুটিতে ঘুরে আসা যায় সুন্দরবন থেকে (অবশ্য পরদিন সকালে এসে অফিস করতে হবে)। বিস্তারিত পড়ুন শাকিলাহ’র লেখা হলুদ নদী, সবুজ সুন্দরবন ট্রাভেল ডাইরিতে।
টাঙ্গুয়ার হাওড়: সমুদ্র ছাড়াও যে কোথাও এত পানি থাকতে পারে, সেটা বোঝার জন্য হলেও একবার সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে যাওয়া দরকার। মাইলের পর মাইল খালি পানি, তাই আকাশটাও চকচকে নীল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ১০০/১০০, কিন্তু অনেকের কাছে একটু কষ্টকর লাগতে পারে। নৌকায় রাত কাটাতে হয়, বাথরুমের ব্যাবস্থাও একটু করুণ। আমি অবশ্য ট্রিপ টা অনেক উপভোগ করেছি। দুই দিনে ঘুরে আসা যায়।
শ্রীমঙ্গল: সিলেট শহরের চেয়ে শ্রীমঙ্গল কে আমার বেশি টুরিস্ট ফ্রেন্ডলী মনে হয়। ঢাকা থেকে তুলনামূলক কাছে হাওয়ায় যাওয়া আসার সুবিধাও বেশি। চা বাগানের মাঝে ঘুরে ফিরে, সাইকেল চালিয়ে ২ দিন কাটিয়ে দেয়া কোনো ব্যাপারই না।
কক্সবাজার, রামু ও মহেশখালী: কক্সবাজার নিয়ে নতুন করে আসলে বলার কিছু নেই। খুবই সুন্দর একটা জায়গা – সবারই পরিচিত। অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু এখনও যখন মাথা না খাটিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করে, কক্সবাজার লিস্টে ১ নম্বর অপশন। সাথে ঘুরে আসতে পারেন রামু বা মহেশখালী থেকে। অল্প সময়ের জন্য গেলে আমি অবশ্য সেন্ট মার্টিন যাওয়া নিরুৎসাহিত করবো।
বান্দরবন ও থানচি: ৩ দিন কেনো, তিন মাসেও বান্দরবন ঘোরা শেষ হবার নয়। কিন্তু দুইদিন তিনদিন করে অনেক জায়গা আছে দেখার। আমরা ২০১৮ তে বান্দরবন আর থানচি থেকে ঘুরে আসি ৩ দিনে। প্রতিটা মুহূর্ত আমরা এঞ্জয় করি। বান্দরবন শহরের একটু বাইরে একটা রিসোর্ট এ ছিলাম একদিন। সেদিন আসে পাশের জায়গা ঘুরে বেড়াই, সাঙ্গু নদীতে নৌকা চালাই। পরদিন নীলগিরি হয়ে সোজা থানচি চলে যাই। সেখান থেকে নৌকায় রাজা পাথর। আর একটু প্ল্যান করে গেলে হয়ত নাফাখুম ঘুরে আসতে পারতাম। পরের বার ইনশাআল্লাহ।
রাঙামাটি: রাঙামাটিতে শেষ গিয়েছি ছোটবেলায়, বাবা মার সাথে। খালি মনে আছে কাপ্তাই নদীতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকায় কাটিয়েছি। দুই বা তিনদিনে এই ট্রিপ সহজেই করা যাবে।
সাজেক ও খাগড়াছড়ি: ২০১৬ এর কোনো এক উইকেন্ডে আমরা খাগড়াছড়ি হোয়ে সাজেক যাই। এক রাত সাজেক থাকি, আর একদিন ঘুরি খাগড়াছড়িতে। এত্ত সুন্দর একটা জায়গা, কিন্তু টুরিস্ট কত কম। আমাদের কাছে মনে হয়েছে খুবই পোটেনশিয়াল একটা জায়গা খাগড়াছড়ি।
শিলং ও ডাউকি, ইন্ডিয়া: সিলেটের তামাবিল বর্ডার পার হলেই অসম্ভব সুন্দর ডাউকি আর শিলং এলাকা শুরু হয়। তিন দিনের ছুটিতে একটু কষ্ট করে শিলংও ঘুরে আশা যায়। ওতো তাড়াহুড়া করতে না চাইলে, উমগট নদীর ধারে সংপদেং (shnongpdeng) গ্রামেই পার করে দেয়া যায় এক রাত। জায়গাটা আমাদের খুবই ভালো লেগেছিলো।
কলকাতা, ইন্ডিয়া: প্লেনে যেতে যদি সমস্যা না থাকে তাহলে ৩ দিনের রেট্রিটের জন্য কলকাতা দারুন। পুরনো রাস্তাঘাট, খবর দাবার, শপিং সব মিলিয়ে ছুটিটা ভালো কাটবে বলে মনে করি। আমরা একবার ৪ দিনের ঝটিকা সফরে কলকাতা আর দিল্লি যাই (দুটো শহর না করে একটা করলে আরাম হতো)। অনেক ক্লান্ত হয়েছিলাম সেই ট্রিপে। কিন্তু স্মৃতি গুলো এখনও অনেক আনন্দ দেয়।
কুয়াকাটা: আমি কুয়াকাটা ২ বার যাই – একবার লঞ্চে একবার বাস এ। কুয়াকাটা যাওয়াটা একটু কষ্টসাধ্য, কিন্তু জায়গাটা অসাধারণ। দেখে মনে হয় যেন ছোট্ট একটা জেলে পাড়া। শেষ গিয়েছি বোধয় ২০১৫ তে। ৩ দিনের সরকারি ছুটিতে গিয়েছিলাম, পাকনামি করে হোটেলের রুম বুকিং দেওয়া হয় নি আগে। হোটেল রুম পেতে যারপরনাই কষ্ট পোহাতে হয়েছিল।
এছাড়াও ঘুরে আসতে পারেন কুতুবদিয়া, নিঝুম দ্বীপ বা ঢাকার আসে পাশে যে কোনো রিসোর্ট থেকে। আমি এ জায়গাগুলোতে যাইনি বলে ডিটেইলস লিখতে পারছি না।
কোনো জায়গা কি মিস করলাম? ২ – ৩ দিনের ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আপনার পছন্দের জাগা কোনটি? লিখে জানান কমেন্টে।